মেজিয়া-বড়জোড়া শিল্পাঞ্চল

বেলিয়াতোড়ে ওঝার নিদানে ডাইনি সাব্যস্ত ও বাড়িতে অপদেবতা পোষার অপবাদে সামাজিক বয়কট,মোটা টাকা জরিমানা,নীরব প্রশাসন!

'তার বাড়ীতে অপদেবতা পোষা আছে! আর নিজেও ডাইনি। গ্রামে জ্বর -জ্বালা,অপমৃত্যু সবের মূলে তার কুদৃষ্টিই কাজ করছে '-এই অপবাদে নিতাই মূর্মুকে সামাজিক বয়কট ও ধাপে,ধাপে প্রায় এক লাখ টাকা জরিমানা বাবদ আদায়ের অভিযোগ উঠল গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে। বেলিয়াতোড় থানার ফকিরডাঙ্গা গ্রামে এই মধ্যযুগীয় প্রথা আজও চলে আসছে। আর এসবই করা হয়েছে এক ওঝার নিদানে। গ্রামের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ বেলিয়াতোড় থানায় লিখিতভাবে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়ে নিতাই মূর্মুর নিরাপত্তার দাবী করেছেন। কিন্তু আজও সমস্যা মেটেনি।

বেলিয়াতোড়ে ওঝার নিদানে ডাইনি সাব্যস্ত ও  বাড়িতে অপদেবতা পোষার অপবাদে সামাজিক বয়কট,মোটা টাকা জরিমানা,নীরব  প্রশাসন!
X

বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : তিনি মানুষের বিপদে,আপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন নিজের পেশার তাগিদে। কিন্তু এভাবে তাকেও যে বিপদের মধ্যে পড়তে হবে তা কল্পনাও করতে পারেননি দমকল কর্মী নিতাই মূর্মু। পানাগড়ে কর্মরত এই দমকল বাহিনীর কর্মীকে তার গ্রামের মানুষের একাংশ ডাইনি অপবাদে ইতিমধেই কয়েক ধাপে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। চলছে সামাজিক বয়কট। এমনকি গ্রামে তার ঘরে ঢোকার রাস্তায় বাঁশের বেড়াও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আবার ওই বেড়ার বাঁশে তৃণমূলের দলীয় পতাকাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। যদিও এখন সেই বাঁশের বেড়া খুলে দেওয়া হয়েছে।

কেন এমন বিড়াম্বনায় পড়তে হল নিতাই বাবুকে? আসলে এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে এক ওঝার নিদান। গ্রামের একাংশের দাবী, নিতাই মূর্মু বাড়ীতে অপদেবতা পোষেন। আর নিজেও তিনি ডাইনি। তার কূ দৃষ্টিতেই গ্রামে অপমৃত্যু ঘটছে। লোকে রোগ অসুখে ভুগছেন। এর পর ওঝার পরামর্শ নেওয়া হয়। কুষ্টিয়া অঞ্চল থেকে শংকর মূর্মু নামে এক ওঝা নিতাই বাবুকে দোষী সাব্যস্ত করে। এবং নিদান দেন যে, অপদেবতা নিতাই বাবুর বাড়িতে আছে সেটিকে গয়াতে পিন্ড দিয়ে আসতে হবে। এর পর গ্রামের কয়েকজন গাড়ী ভাড়া করে গয়াতে গিয়ে পিন্ডও দিয়ে আসেন। কিন্তু এর পরও ছাড় পাননি নিতাই বাবু। ফের দাবী করা হয় ওই অপদেবতা নাকি পিন্ড দেওয়ার পর গ্রামে ফিরে এসেছে। তাই ফের শালিসি সভায় বসে মোটা টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি ধাপে,ধাপে জরিমানা বাবদ এক লাখ টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ।




প্রসঙ্গত,এই মধ্যযুগীয় প্রথার বিলোপ ঘটাতে সাঁওতাল সমাজের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষজন জোর প্রয়াস চালাচ্ছেন। তারা এই ধরনের সমস্যা মেটাতে সাঁওতাল সমাজের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে চলেছেন।কিন্তু এমন কিছু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ১৩ সেপ্টেম্বর ফকিরডাঙ্গায় আলোচনা করে সমস্যা মেটাতে গিয়ে ব্যার্থ হন। ফকিরডাঙ্গার গ্রাম ষোলোয়ানা আলোচনায় বসতে আস্বীকার করায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি অবশেষে, তারা বেলিয়াতোড় থানায় পুরো ঘটনা জানিয়ে নিতাই মূর্মুর নিরাপত্তার দাবী করেন। এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের আর্জি জানান। কিন্তু তার পর কিছুদিন কেটে গেলেও প্রশাসনের নীরব ভুমিকায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।পাশাপাশি,এই জরিমানা আদায়ের যাথে যুক্ত ব্যক্তি ও ওঝার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তিরও দাবী উঠছে।

এখন দেখার এর পর।পুলিশ - প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কতখানি সচেষ্ট হয়?

Next Story