শারদোৎসব

মহা অষ্টমীর তোপ ধ্বনির পর মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে দেবী খচ্চর বাহিনীর আরাধনা মল্লভূমে।

সন্ধিক্ষণের পরই নবমী। আর নবমীর নিশুতি রাতেই মহামারীর দেবী খচ্চর বাহিনীর আবাহনের রীতি মল্লরাজ বাড়ীর দূর্গাপুজোয়। এই দেবীকে তুষ্ট করতে পারলেই মেলে মহামারী থেকে মুক্তি। কথিত আছে যখনই মল্লভূমে মহামারীর প্রকোপ দেখা দিয়েছে, তখনই মল্লভুম কে মহামারীর থেকে রক্ষা করেছেন দেবী খচ্চর বাহিনী। ইনিই মহামারী বা অতিমারীর দেবী

মহা অষ্টমীর তোপ ধ্বনির পর মহামারীর হাত থেকে বাঁচতে দেবী খচ্চর বাহিনীর আরাধনা মল্লভূমে।
X

বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : সন্ধিক্ষণে কামানের তোপ ধ্বনিতে মল্লভূম বিষ্ণুপুরের আকাশ,বাতাস মুখরিত হল। এই কামানের তোপের শব্দে সারা মল্লভূম জুড়ে আজও সন্ধিক্ষন নির্ণয়ের প্রথা চলে আসছে। সন্ধিক্ষণের পরই নবমী। আর নবমীর নিশুতি রাতেই মহামারীর দেবী খচ্চর বাহিনীর আবাহনের রীতি মল্লরাজ বাড়ীর দূর্গাপুজোয়।

এই দেবীকে তুষ্ট করতে পারলেই মেলে মহামারী থেকে মুক্তি। কথিত আছে যখনই মল্লভূমে মহামারীর প্রকোপ দেখা দিয়েছে, তখনই মল্লভুম কে মহামারীর থেকে রক্ষা করেছেন দেবী খচ্চর বাহিনী। ইনিই মহামারী বা অতিমারীর দেবী। খচ্চরের ওপর অধিষ্ঠাত্রী এই দেবীর ভয়াল রূপ দর্শণ করা চলে না। দর্শণ করলেই সর্বনাশ। তাই দেবীর অর্চনা করতে হয় পিছন ফিরে। এই পুজো, অর্চনায় দেবীকে তুষ্ট করলেই মেলে মহামারী থেকে মুক্তি।মহা নবমীর নিশুতি রাতে এই দেবী খচ্চর বাহিনীর পুজোর রীতি চলে আসছে মল্লরাজ পরিবারে।

এই পূজার প্রচলন করেছিলেন ৪৯তম মল্লরাজ, "বারো ভুঁইয়ার" অন্যতম মহারাজ বীর হাম্বীর (১৫৬৫ খ্রীঃ-১৬২০ খ্রীঃ)।জানা যায়, মহারাজ বীর হাম্বীর মধ্যরাত্রে একাকী প্রায়ই দুর্গ পরিদর্শন বের হতেন, এই পরিদর্শণে বেরিয়ে কোন এক রাতে তিনি দেখেন, এক রমণী খচ্চরের উপর আরোহণ করে দুর্গের অভ্যন্তর থেকে বাইরে চলে যাচ্ছেন। গভীর রাতে নগর প্রহরীরা নিদ্রায় আচ্ছন্ন। মহারাজ বার বার ওই রমনীর পরিচয় জানতে চাইলেও কোন কথা বস বলে ওই রমনী খচ্চরে চড়ে তার গমন পথে অবিচল। রেগে গিয়ে রাজা রমণীর উদ্দেশ্যে একের পর এক তীর নিক্ষেপ করতে লাগলেন।কিন্তু তীর গুলি একটাও রমণীর শরীরে না লেগে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তিনি বিচলিত হয়ে স্মরণ করেন,কূল দেবী মৃন্ময়ীকে, অবাক হয়ে তিনি দেখেন সাথে সাথে সেই খচ্চরারূঢা রমণী অন্তর্হিত হয়ে গেছেন। অন্তঃপুরে ফিরে রাতে রাজা দেবীর স্বপ্নাদেশ পান।

দেবী রাজাকে অভয় দিয়ে বলেন, খচ্চরবাহিনী নারী দেবীরই মহামারী রূপ। তিনি নগরভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। মল্লভূমকে মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করতে।দেবী রজাকে মহা নবমীর নিশুতি রাতে মহামারী রূপে পূজোর আদেশ দেন।

শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমীর গভীর রাত্রে রাজ -অন্তঃপুরের লক্ষীঘর থেকে মহামারী দেবীর পট মূর্তি আনা হয় মৃন্ময়ী মন্দিরের গর্ভগৃহের পিছন দিকে। পূজারী দুই ব্রাহ্মণ ও রাজপরিবারের সদস্য ছাড়া কেও এই পুজোয় আংশ নিতে পারেন না। কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। মহা নবমীর নিশুতি রাতে একটি মাত্র প্রদীপ জ্বালিয়ে, ঘট ও পটে দেবীর আরাধনা করা হয়। পুরোহিত পিছন ফিরে পট পুজো করেন।

৫ পোয়া (১.২৫ কেজি)করে গোবিন্দভোগ চাল, মুগ ডাল ও দেশী ঘিয়ের সাথে কাঁচকলা, রাঙ্গা আলু ও সৈন্ধব লবণ দিয়ে তৈরি ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। পূজোর শেষে ব্রাহ্মণদ্বয় ও রাজপরিবারের সদস্যরা প্রসাদ গ্রহণ করেন এবং মধ্যরাত্রেই, সূর্যোদয়ের পূর্বেই সমস্ত কিছু বিসর্জন করে, দেবী পট ফের রাজ-অন্তঃপুরে প্রবেশের মাধ্য দিয়ে পূজার সমাপ্তি ঘটে। দেবী তুষ্ট হলেই তিনি মহামারীর থেকে মুক্তি দেবেন। তাই সবার বিশ্বাস দেবীর কৃপায় করোনা অতিমারী থেকে মুক্ত হবে ধরা।

দেখুন 🎦 ভিডিও। 👇


Next Story