শারদোৎসব

ভাদু ভাসান পরবে মাতল জেলার জঙ্গল মহল।ভাসানে বিন্দাস নাচ দুই মাসিমার! দেখলে মন ভরবে আপনারও।

আজ ১লা আশ্বিন, ভাদু ভাসানের পরবে মাতল জেলার জঙ্গলমহল। ভাদ্র সংক্রান্তিতে রাত জাগরণের পর, শারদ প্রাতে ভাদু গানের সাথে প্রাণ খোলা নাচে জমে উঠল ভাদু ভাসান পরব।

ভাদু ভাসান পরবে মাতল জেলার জঙ্গল মহল।ভাসানে বিন্দাস নাচ দুই মাসিমার! দেখলে মন ভরবে আপনারও।
X

বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : জেলার জঙ্গলমহল আজ মাতোয়ার ভাদু ভসান পরবে। ভাদ্র সংক্রান্তির দিন রাতভর চলে ভাদুর আবাহন ও রাত্রি জাগরন। আর রাত গড়াতেই দরজায় কড়া নাড়ে আশ্বিন। তাই ঘরে রাখার উপায় নেই ভদ্রাবতীকে।

অগ্যতা,আশ্বীনের শারদপ্রাতে ভাদু বিসর্জের ধুম পড়ে যায়। বাদ্য সহকারে ভাদু গানের সাথে নেচে,নেচে ভাদুকে নিয়ে যাওয়া হয় নদী বা জলাশয়ে। এর পর বিসর্জন পর্ব সেরে ফের আরও একটা বছরের জন্য দিন গোনার পালা শুরু হয়ে যায়।

রাঢ় বাংলার লোক উৎসবে ভাদু পরব অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। এই পরবের সব থেকে আকর্ষনীয় বিষয় হল ভাদু গান। এই ভাদু গান এক সময় রাঢ় বাংলার সমাজ জীবন থেকে রাজনীতি, কিংবা হাল কালচারের নানা খুঁটি নাটি তুলে ধরত সাহসের সাথে। তখন আজকের মতো মিমের ছড়াছড়ি ছিল না। তবে ভাদু গানকে আমরা মিমের অতি প্রাচীন একটা সংস্করণ হিসেবে আখ্যা দিতেই পারি।কারণ এক সময় ভাদু গানের মাধ্যমেই সমাজের সমালোচনার পাশাপাশি,শবক শেখানোর পাঠও দেওয়া হত।

এখন ডিজিটাল বিনোদনের ভীড়ে ভাদু গান তার গরিমা হারিয়েছে। তবে এই লোক উৎসব তথা লোকগান শেষ হয়ে যায়নি। আজও রাঢ় বাংলার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া,মেদিনীপুর, বীরভূম ও বর্ধমান সহ প্রতিবেশী রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু অঞ্চলে ভাদু পরবের চল আছে। ভাদু পুজোর প্রচলন নিয়ে নানা লোকগাথা ও জনশ্রুতি ছড়িয়ে আছে। কারও মতে ভাদু পঞ্চকোট রাজপরিবারের নীলমণি সিংদেও এর তৃতীয় কন্যা। তার হবু স্বামী বিয়ে করতে আসার পথে ডাকাতদের হাতে খুন হন। সেই শোকে ভদ্রাবতী চিতার আগুনে প্রাণ বিসর্জন দেন।এর পরই রাজা মেয়েকে জন মানসে স্মরণীয় করতে ভাদু পুজোর প্রচলন করেন।আবার বীরভূমে প্রচলিত আছে ভদ্রাবতী হেতমপুরের রাজার কন্যা।তার হবু স্বামী বিয়ে করতে আসার পথে ইলামবাজারের জঙ্গলে ডাকাত দলের আক্রমণে প্রাণ গেলে ভদ্রাবতী সহমরণে চিতায় ঝাঁপ দেন। আবার অনেক লোক গবেষক ভাদুকে কোনো ভাবেই লৌকিক বা বৈদিক দেবী হিসেবে স্বীকৃতি দেন না। আবার অনেকে দাবী করেন, করম নামে আদিবাসী উৎসবের হিন্দু সংস্করণ এই ভাদু। তবে বাস্তবে জাওয়া বা জাউয়া গানের সাথে ভাদু গানের মিল নেই। তাই এই তত্ত্বও খাটে না। আর লোকগাথারও কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। ভাদু পুজোর উৎপত্তি নিয়ে কোন প্রতিষ্ঠিত তথ্য আজও অধরা। তাই কিছু জনে মনে করেন, ভাদু হলেন শষ্যের দেবী। আর রমনীদের দেবী।

এনিয়ে, এমন নানা বিতর্ক আছে এবং থাকবেও। তবে সে সব বিতর্কে জল ঢেলে ফি বছর ভাদু বন্দনা চলে আসছে যুগের পর যুগ। আর এই উপলক্ষ্যে খাজা,জিলিপির মতো বৈচিত্র্যময় মিষ্টান্নও ভোগ হিসেবে নিবেদন হয়েও আসছে। তবে,সব মিলিয়ে ভাদু উৎসব গ্রাম বাংলায় লোক উৎসবের অন্যতম আইকন হয়ে উঠেছে এবিষয়ে কোন গবেষকের দ্বিমত নেই।

দেখুন 🎦 ভিডিও। 👇


Next Story