শহর বাঁকুড়া

শিশু পাচার কান্ড: ৫ শিশুই কি রিয়ার? সন্দেহ নিরসনে আদালতে ডিএনএ টেস্টের আবেদন করল পুলিশ।

কাদারোডের যৌন পল্লীর বাদিন্দা রিয়ার মা সুনীতা দেবী এবং শিশু গুলির মামা রিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে এমন কান্ড ঘটাল নিছক রিয়াকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে রিয়ার ভরন পোষনের দায় ঝেড়ে ফেলার জন্য, না কোভিড আবহে শিশু বিক্রির ব্যবসা ফেঁদে মোটা টাকা কামানোর জন্য? তা নিশ্চিত করতেই বাঁকুড়া আদালতে এই ৫ শিশুর ডিএনএ টেস্ট করার অনুমতির জন্য আবেদন করেছে পুলিশ।

শিশু পাচার কান্ড: ৫ শিশুই কি রিয়ার? সন্দেহ নিরসনে আদালতে ডিএনএ টেস্টের আবেদন করল পুলিশ।
X

বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : শিশু পাচার কান্ডে তদন্তের জাল গুটোচ্ছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই দুর্গাপুর থেকে আরও এক অভিযুক্ত বিকাশ গুপ্তাকে ধরে ফেলেছে পুলিশ। বাঁকুড়ার নবোদয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুষমা শর্মা যিনি রিয়ার ৯ মাসের শিশু পুত্রকে কিনেছিলেন তারই ভাই এই বিকাশ গুপ্ত। এই বিকাশই দুর্গাপুরের কাদারোডের চা বিক্রেতা স্বপন দত্তের মাধ্যমে রিয়ার যাথে শিশু কেনা- বেচার মধ্যস্থতা করে। এদিকে,প্রায় বছর দেড়েক আগ্র স্বামী মারা যাওতার পর শিশুদের নিয়ে রিয়া কাদারোডের রেড লাইট এলাকায় মা সুনীতা বাদ্যকরের বাড়ীতেই থাকতেন। বছর ২৩ এর রিয়া দেবী তার এই অল্প বৈবাহিক জীবনে কি করে ৫ শিশুর জন্ম দিলেন? তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেন জেলা পুলিশের তদন্ত আধিকারিকরা।

তার ওপর, রিয়া নিজেই জানিয়েছে বছর দেড়েক আগে সে তার স্বামীকে হারিয়েছে। অথচ তার সব চেয়ে ছোটো শিশু পুত্র যাকে সুষমা দেবী কিনেছিলেন তার বয়সই মাত্র ৯ মাস তাই স্বাভাবিক ভাবেই এই শিশুর প্রকৃত মা রিয়াই কিনা? তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও রিয়া পুলিশের কাছে দাবী করে, তার মায়ের পরামর্শে ফের নুতন করে বিয়ের পিঁড়িতে বসার সিদ্ধান্ত নেয় সে।


তাই বিয়ের আগে তার এই ৫ শিশুকে বেচে দেওয়ার পথ বেছে নেয়। প্রথমে তার ৯ মাসের শিশু পুত্রকে বিক্রি করে। শিশু বিক্রি বাবদ রিয়া নিয়েছিল ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সেই টাকাও কাদারোড থেকে বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। এদিকে, সুষমা দেবী জানিয়েছেন শিশু কিনতে তিনি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন।

পুলিশ এখন খতিয়ে দেখছে রিয়া তার একটি শিশুর জন্য না ৫ টি শিশুর জন্য এই টাকা পেয়েছে। এদিকে,পুলিশি জেরায় রিয়া জানিয়েছে, একে,একে সবকটি শিশুকে বেচে মোটা টাকা রোজগার করে নুতন সংসার পাততেই ৯ মাসের শিশুপুত্রের সাথে আরও দুই শিশু কন্যাকে বেচে দেয় নবোদয় বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল কমল কুমার রাজোরিয়াকে। কমল রাজোরিয় শিশু দুটিকে আত্মীয়ের বাচ্চা পরিচয় দিয়ে নিজের কোয়ার্টারে রেখেছিলেন।


তার মতলব ছিল যেহেতু রাজস্থানে মেয়েদের চাহিদা বেশী তাই এই দুই শিশু কন্যকে বড়ো করে মোটা টাকায় বেচবেন। এরই মধ্যে রিয়া তার বিয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো আরও দুই শিশুকে সে বেচে দেওয়ার বায়না ধরে। আর আরও দুই শিশু সহজে মিলে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারেন নি কমল রজোরিয়া। তাই বাকী দুই শিশু নিয়ে বাঁকুড়ার কালপাথরে নবোদয় বিদ্যালয়ে প্রিন্সিপালের কোয়ার্টারে হাজির হয়।

সেই সময় শিশু গুলি কান্নাকাটি জুড়ে দেওয়ায় স্থানীয় মানুষের তা নজরে পড়ে।এবং শিশু পাচারের সন্দেহ হওয়ায় স্থানীয় মানুষ রিয়াকে আটকে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ রিয়া ও প্রিন্সিপাল কে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো শিশু পাচার চক্রের সিন্ডিকেটকে ধরে ফেলে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। এখন পুলিশ নিশ্চিত হতে চাইছে এই পাঁচ শিশুর প্রকৃত মা রিয়াই? না সে কোন ভাবে শিশু জোগাড় করে তার এই শিশু বিক্রির কারবার ফেঁদে ছিল? কাদারোডের যৌন পল্লীর বাদিন্দা রিয়ার মা সুনীতা দেবী এবং শিশু গুলির মামা রিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে এমন কান্ড ঘটাল নিছক রিয়াকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে রিয়ার ভরন পোষনের দায় ঝেড়ে ফেলার জন্য, না কোভিড আবহে শিশু বিক্রির ব্যবসা ফেঁদে মোটা টাকা কামানোর জন্য? তা নিশ্চিত করতে চাইছে পুলিশ। তাই বাঁকুড়া আদালতে এই ৫ শিশুর ডিএনএ টেস্ট করার অনুমতির জন্য আবেদন করেছে পুলিশ।

এদিকে,যদি এই এই পাঁচ শিশু রিয়ার সন্তান,সন্ততি না হতে থাকে তাহলে তদন্তে আরও বড়ো অপরাধ চক্রের হদিশ মিলতে পারে? সেক্ষেত্রে, কোভিড আবহে কাদারোডের রেড লাইট এলাকায় বিকল্প কারবার হিসেবে এই শিশু পাচারকেই বেছে নেওয়ার মতো ঘটনা উঠে এলেও আবাক হওয়ার কিছু নেই! তবে, ঘটনা যাই উঠে আসুক না কেন? বাঁকুড়ার এই শিশু পাচার কাণ্ড সামাজিক মানদণ্ডকে যে ভাবে কলুষিত করল, তা মানবিকতার লজ্জা!

Next Story