শহর বাঁকুড়া

কোভিড আবহে এবার ভিন রাজ্যের বরাত অধরা!আকারও কমল কেঞ্জাকুড়ার জাম্বো জিলিপির।

এমন পেল্লাই সাইজের জিলিপি তৈরীর কারিগরদের মুন্সিয়ানা বাংলার মিষ্টান্ন শিল্পের গর্ব। তাই এই জাম্বো জিলিপির পেটেন্ট পাওয়ার জন্য আবেদনের দাবীও উঠছে স্বাভাবিক ভাবেই। এখন দেখার, কেঞ্জাকুড়ার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা জি,আই পেটেন্ট পেতে আবেদন করার ক্ষেত্রে কতখানি উদ্যোগী হন?

কোভিড আবহে এবার ভিন রাজ্যের বরাত অধরা!আকারও কমল কেঞ্জাকুড়ার জাম্বো জিলিপির।
X

বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : কোভিডের জেরে মন্দার বাজারে এবছর আকার কমে গিয়ে গরিমা হারাল বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ার জাম্বো জিলিপি! কোভিডের ঢেউ আছড়ে পড়ল জিলিপির কড়াইয়েও। গত দুবছরে এক ধাক্কায় কমে প্রায় আর্ধেক হল জাম্বো জিলিপির আকার। কোভিড আবহে গত বছর থেকেই কেঞ্জাকুড়ার জাম্বো জিলিপির বিক্রি কমে গিয়েছিল। এবার দোকানীদের আশা ছিল বাজার হয়তো গত বছরের তুলনায় ভালো হবে। কিন্তু এবছরও ভিন রাজ্য বা ভিন জেলা থেকে মেলেনি জাম্বো জিলিপি বরাত। তার ওপর স্থানীয় কেঞ্জাকুড়ার কাঁসা-পিতলের ব্যবসা শিকেয় উঠেছে কোভিড আবহে। এখানকার তাঁত ও গামছা শিল্পেও মন্দা,এমন কি একানকার বাঁশের শিল্প কর্মের ও বিক্রি নেই। বর্ষায় বালি উত্তোলন বন্ধ থাকায় দ্বারকেশ্বর নদী তীরবর্তী এই গ্রামে শ্রমিকরাও কাজ হারিয়েছেন। সবে মিলে জাম্বো জিলিপি কেনার হিড়িক একেবারে তলানিতে ঠেকেছে।

এখানকার বিখ্যাত জিলিপির দোকানের মালিক মুক্তা দত্তের সাফ জবাব,এবার ভিন রাজ্য যেমন ঝাড়খন্ড,বিহার, ওড়িশা বা ভিন জেলা বর্ধমান,পুরুলিয়া,পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে অন্যবার যে অর্ডার আসে এবার কোভিডের জন্য তা আসেনি। স্থানীয় মানুষের হাতেও টাকার টান। তাই নিয়ম রক্ষার জন্য এবার জাম্বো জিলিপি তৈরী হচ্ছে ঠিকই, তবে তা আকার ও আয়তনে অনেক খানি কমে গেছে।


অন্যবার তিন,চার,পাঁচ কেজি ওজনের জিলিপির বরাত মিলত। এবার তা কমে এক থেকে দেড় কেজিতে কমেছে। গত বারের তুলনায় দামও বাড়ানো হয়নি। কেজি প্রতি ১৪০ টাকায় দাম রাখা হয়েছে। তবুও চাহিদা নেই। তবে এখানকার পরম্পরা মেনে প্রতি বছর যারা অর্ডার দেন রারা যথারিতি অর্ডার দিচ্ছেন, কেও,কেও কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন। তবে তার আকার আর ওজন ওই এক থেকে দেড় কেজিতেই থমকে আছে।

অথচ একটা সময় কে কত বড়ো জিলিপির অর্ডার দেবেন তার প্রতিযোগিতা চলত। বেয়াই বাড়ীতে বিশালাকার এই জিলিপি পৌঁছে দিয়ে কেঞ্জাকুড়ার বনেদি বাবুরা নিজের বীরত্ব জাহির করতেন। এই রিতীর এখনও প্রচলন আছে। তবে কোভিড আবহে এবার এমন বরাত নামমাত্র মিললেও আকার ও ওজন কমে গিয়েছে। আবার অনেকে কোভিডের জন্য বেয়াই বাড়িতে জিলিপি পাঠাচ্ছেন না এবছর। ফলে বিশালাকার জিলিপি তৈরীর সুযোগই মেলেনি এবার। তার ফলে মন ভালো নেই জাম্বো জিলিপির কারিগর অশোক ভুঁই বা হারাধন কুম্ভকারদের। তারা জানালেন কোভিড আবহেই এবছর এমন হাল।কেঞ্জাকুড়ার এই জাম্বো জিলিপির পরম্পরা যুগযুগ ধরে চলে আসছে। তাই এই পরম্পরাকে টিকিয়ে রাখতে দোকানে জিলিপি কিনতে ভীড় জমাচ্ছেন যুথিকা দাসের মতো এই নুতন প্রজন্মও।

যুথিকা এবছর এক কেজি ওজনের জিলিপি কিনেছে। অন্যবার অবশ্য বাড়ীতে তিন কেজির জিলিপি ঢুকত। আসলে এবার পরিস্থিতি অন্যরকম। তবুও পরম্পরা রক্ষাটাই তার কাছে বড়ো। সাইজ একটূ কম,বেশীর থেকে বরং এই জাম্বো জিলিপি,যা কেঞ্জাকুড়ার আইকন তাকে বাঁচিয়ে রাখটাই বড়ো কথা। এমনটাই জানালেন যুথিকা।

ফি বছর ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিন ভাদু ও বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে কেঞ্জাকুড়ার ঘরে,ঘরে এই জাম্বো জিলিপি খাওয়ার পরম্পরা চলে আসছে যুগ,যুগ ধরে। আর এমন পেল্লাই সাইজের জিলিপি তৈরীর কারিগরদের মুন্সিয়ানা বাংলার মিষ্টান্ন শিল্পের গর্ব। তাই এই জাম্বো জিলিপির পেটেন্ট পাওয়ার জন্য আবেদনের দাবীও উঠছে স্বাভাবিক ভাবেই। এখন দেখার কেঞ্জাকুড়ার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা জি,আই, পেটেন্ট পেতে আবেদন করার ক্ষেত্রে কতখানি উদ্যোগী হন?

👁️দেখুন 🎦 ভিডিও। 👇


Next Story